বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান – আব্দুর রহমান আল হাসান



বাংলাদেশের বয়স মাত্র ৫০ বছর। কিন্তু এই বছরগুলোয় অর্জন এত বেশি নয়। বরং অনেক কম। প্রতিটি বছর আমাদের দেশে বাজেট পাশ হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন জিনিষ আরো উন্নত করা হয়। ব্রিজ, রাস্তাঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল, রেল স্টেশনগুলোতে প্রতি বছরই সংস্করণ করা হয়। এর ফলে কখনো কখনো এটা জনগণের জন্য সুবিধা বয়ে আনলেও পরিবেশকে এর জন্য মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয়। গত মাসের শেষের থেকেই বাংলাদেশের সিলেট ও এর আশেপাশের অঞ্চলে বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে। এর ফলে সরকারি হিসাবমতে, প্রায় ১০ লাখ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এদের সমষ্টি প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।

এই বন্যায় মৃতের সংখ্যাও কম নয়। যারা সাঁতার পারে না, তাদের জন্য তো দুঃসংবাদ বটে। যারা সাঁতার পারে, তারাও কতক্ষণ এই পানিতে সাঁতরাবে? গত কয়েকদিন যাবৎ সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানি আগে থেকে আরো বেড়ে গেছে। এর ফলে বহু ঘর-বাড়ি অর্ধেক পানির নিচে। কিংবা পুরোটাই পানির নিচে চলে গিয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি, এটা নির্বিঘ্নেই বলা যায়।

একটা সমীক্ষা দেখি। সিলেট ও সুনামগঞ্জে মোট জনসংখ্যা (সিলেট: ৩৪,০৪,০০ জন; সুনামগঞ্জ : ২৪,৪৩,০০০জন) প্রায় ২৭৮৩,৪০০ জন। এদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসায়ী। কেউ বা কর্মজীবী। তবে বড় একটি অংশই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। ফলে এই বন্যায় তাদের দুরবস্থা আরো বেশি। তাদের ঘর-বাড়িতে পানি থাকায় ঘরের ফার্নিচার, প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র, বই-খাতা, ইলেক্টনিক ডিভাইসসহ আরো অনেক কিছুই ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এর ফলে প্রায় ২০০ কোটির উপর সম্পদ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এত সম্পদ নষ্ট হওয়ার পরও তাদের জন্য কত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে?

সরকারিভাবে তাদের জন্য মাত্র ৬০ লাখ কিংবা ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ কিছুদিন আগে একটি নিউজে দেখেছিলাম, ৫ লাখ বাচ্চাদের সাঁতারের জন্য সরকার ২৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অবস্থা দেখেছেন? ২৭১ কোটি!

অথচ ৩০ লাখ মানুষের জন্য ৬০ লাখ বরাদ্দ। জনপ্রতি দুই টাকা করে। ডলারের দাম এখন যেভাবে বাড়ছে, দুই টাকা দিয়ে কি বন্যার্ত ব্যক্তিরা চাল-ডাল কিছু পাবে? আচ্ছা, চাল-ডাল বাদ দিলাম। মুড়ি তো খুব সস্তা। মুড়িও তো পাবে না তারা। বর্তমানে এক কেজি মুড়ির দামও ৫২ টাকা থেকে ৬০ টাকা করে। তাহলে উক্ত ফ্যামিলিতে যদি ৫ জন থাকে। তাহলে ৫ গুণ ২ সমান সমান ১০ টাকা। উক্ত পাঁচজন মিলে তো আধা কেজি মুড়িও কিনতে পারবে না। তাহলে উক্ত ৬০ লাখ টাকা কি লোক দেখানোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে?

আচ্ছা, কেউ কেউ হয়তো বলবেন, অনেকেই তো স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছে। তাহলে অসুবিধা কোথায়? আছে ভাই অসুবিধা আছে। এসব ফাউন্ডেশন কিংবা ব্যক্তি অথবা দল কয়টা পরিবারকে সাহায্য করছে?

৫০০ বা ১০০০ কিংবা দশ হাজার? তাহলে বাকী ২৯ লাখেরও বেশি মানুষের কি হবে? তাদের কি আসমান থেকে সাহায্য আসবে? আল্লাহ তো মাধ্যম খোঁজেন। তিনি তো আপনাকে টুপ করে দিবেন না। কারণ, মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ। বিশ্বাস না হলে বনী ইসরাইলের ঘটনাটা পড়ুন।

ব্রাকের হিসাব অনুযায়ী বন্যার্ত মানুষের সহায়তার জন্য প্রায় ২৭ কোটি টাকা প্রয়োজন। উক্ত টাকাগুলো কোথা থেকে আসবে জনাব? আপনি ভাবতে পারেন, উক্ত কথাগুলো আমি কেন বললাম।

মানুষ মানুষের জন্য বলে একটা কথা আছে। আমি আপনার জন্য সম্পদ দিয়ে যতুটুকু সাহায্য পারবো, তা করবো। না পারলে যারা সাহায্য করতে পারবে, তাদের নিকট আপনাকে পাঠাবো। যাতে আপনি সাহায্য পান। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যায় সরকার এগিয়ে আসবে, এমনটা ভাবলে আপনি মাঠে মারা যাবেন। সরকার উন্নয়নের পেছনে ছুটে। অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্থদের পেছনে নয়। করোনাকালে দেখেন নি? মুজিববর্ষ পালন করতে গিয়ে করোনার খবর ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। ফলে কত মানুষ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।

সরকার মানুষকে ঘর বানিয়ে দিয়েছিল। সেই ঘর কতদিন টিকেছে? রাস্তা কিভাবে বানিয়েছিল, তা তো জানেনই। অতএব অসহায় মানুষের পেছনে আপনারই এগিয়ে আসতে হবে। আপনাকেই অগ্রসর হতে হবে। আপনাকেই পাশে দাঁড়াতে হবে।

আপনি চাইলে বিভিন্ন মাধ্যমে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারেন। বাংলাদেশে বর্তমানে অনেকেই কাজ করছে। এর মধ্যে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, কলরব, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ভিপি নূরসহ আরো অনেক ব্যক্তিরাই। সকলেই কাজ করছেন বন্যার্ত মানুষের জন্য। তাদের মধ্য থেকে যাকে আপনার পছন্দ হয়, তার নিকট আপনি আপনার সাহায্য পাঠাতে পারেন। আপনার এই সাহায্য বৃথা যাবে না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মায়াবী নদী - স্বপ্না ফাতেমা

শৈশবের স্কুল জীবন - আবু তাহের ইসলাম

স্মৃতির পাতা - সানজিদা হোসাইন