মায়াবী নদী - স্বপ্না ফাতেমা


Nobeen Dipto

মিনি হঠাৎ থেমে গেল। সামনেই একটা নদী। নদীটির নাম মায়াবী নদী। ছোটবেলা থেকেই মিনি শুনে এসেছে, এই নদীর কাছে যারাই গিয়েছে তারা আর কখনো ফিরে আসে নি। কিন্তু মিনি এটা বিশ্বাস করতে চায় না। সে খুব সাহসী। মিনি তার পরিবারকে একদম পছন্দ করে না। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছা করে দূরে কোথাও চলে যেতে। কিন্তু এতুটুকুন মেয়ে যাবেই বা কোথায়। মিনির একটা সমস্যা আছে। সে খুব জেদি। তার যখন যেটা ইচ্ছা হবে, সেটাই সে করবে। তাকে কেউ তার কথা থেকে নাঁড়াতে পারে না। মিনি মায়াবী নদীর কিনারা ধরে হাঁটতে লাগলো। নদীর দু’ধারে গাছ। প্রতিটি গাছেই রয়েছে নাম না জানা অসংখ্য পাখি। কোনো কোনো পাখি পাখা মেলে উড়াল দিচ্ছে। আবার কিছু পাখি ফিরে আসছে। মিনির চোখে পড়লো, কিছুটা দূরেই রয়েছে একটা মাঁচা। মাঁচাটি দেখে ভাবলো, এখানে তো কেউ আসেই না। তাহলে এই মাঁচা আসলো কোথা থেকে? মাঁচাটিকে ছায়া দিয়ে বিশাল একটি বটগাছ। এত চওড়া আর লম্বা বটগাছ এই প্রথম দেখলো মিনি।

মিনি মাঁচাটিতে খানিকক্ষণের জন্য বসলো। নদীর পাশের এই ঘন জঙ্গলে হয়তো ভূতেরাই বাস করে। এমনটাই ভাবলো মিনি। মিনি খেয়াল করলো, অদ্ভূত এক ঘ্রাণ তাকে মোহিত করে দিচ্ছে। সে আগে কখনো এমন ঘ্রাণ অনুভব করে নি। এক অচেনা মায়ার বন্ধন মিনিকে যেন আবদ্ধ করে নিল। ঘুমিয়ে পড়লো সে। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে জানে নাচোখ খুলে খেয়াল করলো, সে অন্য এক জায়গায় চলে এসেছে। এখানকার সবকিছুই কেমন যেন নীল। সাথে রয়েছে সবুজের হালকা প্রলেপ। মিনির খুব ভালো লাগলো জায়গাটা। কিন্তু এটা কোথায়, সে ভাবতে লাগলো। মিনি অনুভব করলো, ভূমিটি যেন কাঁপছে। দেখতে পেল, তার পাশ দিয়ে মাছ সাঁতার কেটে যাচ্ছে। বুঝতে পারলো, সে এখন পানির নিচে। সাঁতরে উপরে উঠার চেষ্টা করলো মিনি। নাহ্, পারছে না সে। বারবার অদ্ভূত কিছু একটার টানে আরো পানির নিচে চলে যাচ্ছে।  হঠাৎ মিনি একটা জরপরী দেখতে পেল। সে মিনিকে বললো, আমাদের মায়াবী নদীতে স্বাগতম। মিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, আমি মায়াবী নদীর মধ্যে? জলপরীটি হেসে বললো, হ্যাঁ। মিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলো, আমি কি উপরে উঠতে পারবো না? জরপরীটি হাসতে হাসতে বললো, না। মিনি এবার খানিকটা ভয় পেয়ে গেল। বুঝলো, সে একটা গুরুতর বিপদে পড়েছে। মিনি দেখলো, জলপরিটির হাতে অদ্ভূত এক লাঠি। লাঠিটির উপরে একটা তারার চিহ্ন। মিনি বইতে পড়ছিল, এমন লাঠি জাদুকরেরা ব্যবহার করে থাকে। উক্ত জলপরীটি লাঠিটি উপরে উঠাতেই সেটার মধ্য থেকে একটা নীল রঙের আলো বের হলো। মিনি কাম্ববিলম্ব না করেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাফ দিয়ে অন্যপাশে পড়লো। আলোটি একটা ব্যাঙের শরীরে লাগলোঅমনি সেটি মাছ হয়ে গেল। মিনি বুঝতে পারলো, ব্যাঙটিও হয়তো কোনো মানুষ ছিল। মিনি সেখান থেকে পালানোর জন্য সাতার কাঁটতে লাগলো। কিন্তু সে সাতার কেটে সামনে যেতে পারে কিন্তু উপরে উঠতে পারছে না। হঠাৎ পাথরের পেছন হতে একটা মাছ এসে মিনিকে টেনে আবার পাথরের পেছনে নিয়ে গেল। মাছটি মানুষের মতো মিনিকে বললো, চুপ করে থাক। না হলে ওই জরপরী তোমাকে ধরে ফেলবে।

মিনি অবাক হয়ে গেল যে, মাছও মানুষের মতো কথা বলে। হঠাৎ মিনির মনে হলো, এই কণ্ঠটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। মাছটি যেন মিনির এই অবস্থা বুঝতে পারলো। সে বললো, আমি লীনা। মিনির মনে পড়ে গেল, লীনা দুই মাস আগে হারিয়ে গেছে। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে লোকেমুখে শোনা যায়, সে মায়াবী নদীর কাছে এসে হারিয়ে গেছে। মিনি তখন লীনার গায়ে হাত দেয়ার সাথে সাথে সে তার রুপ ফিরে পায়। মিনি বললো, আমাদের এখান থেকে বের হওয়া উচিৎ। কিন্তু বের হবো কিভাবে? লীনা বললো, জলপরির জাদুর লাঠিটি আমরা হাতে পেলেই এখান থেকে আমরা বের হতে পারবো।

লীনা আর মিনি জলপরির আস্তানার দিকে গেল। দূর থেকে দেখলো, জলপরিটি একটা খাঁচা বানাচ্ছে। মিনি বুঝতে পারলো, সে তাদেরকে আটক করে রাখতে চায়। লীনা খেয়াল করলো, জাদুর লাঠিটি জলপরি ঘরের দরজার পাশে রেখে দিয়েছে। মিনিকে দেখাতেই মিনি আস্তে আস্তে জাদুর লাঠিটির দিকে আগাতে লাগলো। কাছে গিয়ে লাঠিটি হাতে নিতেই অদৃশ্য এক শক্তি মিনিকে আড়ষ্ট করে ধরলো। মিনির মনে হলো, সে এখন এই নদীর বাহিরে যেতে পারবে। লীনাকে নিয়ে যেই সে বাহিরে আসার জন্য আগ বাড়ালো অমনি জরপরিটি তাদের ধরার জন্য আসতে লাগলো। লীনা মিনিকে বললো, আমাদের তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। আমরা বের হয়ে গেলে সে আর কখনো বের হতে পারবে না। মিনি শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে সাঁতরিয়ে নদীর গভীর থেকে পারে উঠে এলো।

তারা পারে উঠতেই মনে হলো, একটা অদৃশ্য দেয়াল যেন তারা ভেদ করে বের হয়ে এসেছে। দুজনেই খুশীতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। মিনি মনে মনে লজ্জিত হলো। কারণ, সে তার বাবা-মায়ের সাথে খুব বেশি রাগ করে। রাগ করা ভালো নয়, এটা সে বুঝতে পারলো। কারণ, দুই মাস আগে লীনা তার বাবার সাথে রাগ করে এখানে আসার কারণেই হারিয়ে যায়।

মিনি লীনাকে জিজ্ঞাসা করলো, লাঠিটি কি করবো? লীনা বললো, এটা আগুনে পুঁড়িয়ে দাও। আগুনে পুঁড়িয়ে দিলে জলপরি আর কখনো কারো ক্ষতি করতে পারবে না। লীনার কথামতো মিনি লাঠিটি আগুনে পুড়িয়ে দিলো। আগুনে পুঁড়িয়ে দেয়ার পর মনে হলো, মায়াবী নদীর দৃশ্য পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই জায়গাটি এখন আর ভূতুড়ে জায়গা নয়। অদ্ভূত সুন্দর এক জায়গা। আশেপাশের ফুলের গাছ থেকে এক অজানা সৌরব ভেসে আসে। যা সকলকেই মোহিত করে দেয়। মানুষ এই নদীর নাম পাল্টিয়ে নাম রাখলো, স্বপ্না নদী।

শিক্ষা; কেউ কারো ক্ষতি করতে গেলে সে মূলত নিজেরই ক্ষতি করেকিন্তু এটা সে বুঝতে পারে না

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শৈশবের স্কুল জীবন - আবু তাহের ইসলাম

স্মৃতির পাতা - সানজিদা হোসাইন